সৃষ্টি,মহাবিশ্ব,জান্নাত আর বিজ্ঞান।

সৃষ্টি,জান্নাত আর বিজ্ঞান। 






সৃষ্টির রহস্য ভেদ করতে গিয়ে আমাদের আজো বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতবাদ এর উপর নির্ভর করতে হয়। উনার মতামতের সমালোচনা ছিল অনেক কিন্তু এই ধারণা টি মিথ্যা এমন কেও প্রমান করতে পারেনি।
সৃষ্টির রহস্য কে আমরা ২ টি ভাগে ভাগ করতে পারি। ১/- জীব সৃষ্টি ২/- মহাবিশ্ব সৃষ্টি (মহাশূন্য সহ সমস্ত গ্রহ ও নক্ষত্র)
বিজ্ঞানের মতে ক্যামিকেল রিয়েকসান এর ফলেই প্রাণের উৎপত্তি। আবার বিজ্ঞান এও বলছে যে; সূর্যের প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ফলে নয়টি গ্রহ ও উপগ্রহ গুলি সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পৃথিবী ছিল উত্তপ্ত জ্বলন্ত একটা পিণ্ড। ধিরে ধিরে এটি ঠাণ্ডা হতে থাকে এবং এর ফলে জলের উৎপত্তি। জল থেকে প্রথম প্রাণ হিসাবে এমিবা নামক এক কোষী প্রানী, এর পর এলো শ্যাওলা, মাছ সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। ধারণা করা হয় হিমালয় হলো প্রথম মৃত্তিকা। বিভিন্ন প্রাণীর জিবাস্ম থেকে ই হিমালয়ের উৎপত্তি।
আবার আরেকটি ধারণা থেকে পাওয়া যায়; পৃথিবী সূর্য থেকে বিচ্যুত হয়ে ধিরে ধিরে ঠাণ্ডা হতে থাকে এবং এর ফলে বরফ এর সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গ্রহাণু, ধূমকেতু, উল্কার আঘাতে পৃথিবীর বরফ গুলি গলতে থাকে এবং জলের সৃষ্টি হয় এবং এ জল থেকেই প্রানের উৎপত্তি।
বেদ মতে নিরাকার মহাশক্তি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিলেন এবং তিনি ঘুমন্ত ছিলেন। হঠাত তিনি জাগ্রত হয়ে নিজের বিকাশের জন্যে ঊর্ধ্ব মুখি উঠার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। যেহেতু তিনি মহাশক্তি সেহেতু ইচ্ছা মাত্রই তিনি গতি প্রাপ্ত হলেন। হঠাত গতি প্রাপ্ত হওয়াতে বিস্ফোরণের সৃষ্টি হলো এবং এই বিস্ফোরণের থেকে সৃষ্ট আগুন, শব্দ ও আলোকে স্থান দেবার জন্যে মহাশূন্যের সৃষ্টি হলো। এই বিস্ফোরণের শক্তি সীমা ছেরে অসীমের দিকে ধাবিত হতে থাকে; এ কারণে মহাশূন্যের কোন সীমা নেয়। বেদ মতে মহাশক্তি প্রতিনিয়ত তাঁর শক্তির সাহায্যে মহাসুন্য সৃষ্টি করে যাচ্ছেন যার কুল কিনারা পাওয়া সম্ভব নয় কোনদিন।
বিজ্ঞান বলছে আদি প্রান হলো ডাইনোসার এবং গ্রহানুর আঘাতের ফলে তারা মারা যায় এবং পরবর্তীতে আবার নতুন করে প্রানের বিকাশ ঘটে। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যায় গ্রহানু গুলি এশিয়াতে আঘাত করেনি, আঘাত করেছিল আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের দিকে। তার প্রমান হলো আমাদের এশিয়ার মাটি বালি যুক্ত কিন্তু আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের মাটি পাথুরে। গ্রহাণুর আঘাতে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের মাটি জ্বলে পাথরে পরিণত হয়েছিল সেই সময়ে। এশিয়াতে তখন খুব বেশি ডাইনোসার এর বিচরন ছিল না। যত গুলি ডাইনোসার এর ফসিল পাওয়া গেছে এই পর্যন্ত বেশির ভাগ ই এশিয়ার বাইরে।
বেদ, পুরান, রামায়ণ এবং মহাভারতে ও আমরা এই ডাইনোসার এর উপস্থিতই লক্ষ্য করি; উদাহরণ হিসাবেঃ ১/ বাল্মিকি মুনি তাঁর শীর্ষ রাম ও লক্ষণ কে নিয়ে মুনির আশ্রমে যাবার পথে কিছু উরন্ত রাক্ষস এর কবলে পরেন তারা, ভগবান রাম বিরত্তের সাথে সেই রাক্ষস গুলিকে নিধন করেন। এই উরন্ত রাক্ষস গুলি ছিল ডাইনোসার। ২/ রামায়ণের জটায়ু পক্ষীর যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা প্রকৃত পক্ষে এক জাতের ডাইনোসার। ৩/ ভগবান শ্রী কৃষ্ণের কালীয় নাগ দমন; এই কালীয় নাগ ছিল ডাইনোসার। ৪/ ভগবান শ্রী কৃষ্ণের পঞ্চ নাগ ও এক প্রকারের ডাইনোসার। ৫/ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ দারা বকাশুর নিধান হয়; এই বকাশুর ছিল এক জাতের ডাইনোসার। ৬/ পৌরানিক যুগে এক উড়ন্ত রাক্ষস কে ভগবান ব্রাহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর মিলে নিধন করেছিলেন; সেই উড়ন্ত রাক্ষস টি ছিল এক জাতের ডাইনোসার (সম্ভবত ঈগল প্রজাতির ডাইনোসার)। ৭/ ভগবান বিষ্ণু সাগরে যে সাপ এর উপর ভেসেছিলেন এবং যোগ নিদ্রায় শায়িত ছিলেন তাও এক প্রকার ডাইনোসার।
গ্রহানুর আক্রমণে যখন ডাইনোসাররা মারা যায় তখন কিছু সামদ্রিক ও উড়ন্ত ডাইনোসার আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ হতে এশিয়াতে প্রান নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। যা আমাদের বেদ, পুরান, রামায়ণ এবং মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে প্রমান পাওয়া যায়।
আমি আমার সীমিত জ্ঞান দারা বর্ণনা করার চেষ্টা করলাম নিরাকার মহা শক্তি, সৃষ্টি, পৃথিবীর উৎপত্তি ও ডাইনোসার নিয়ে যা দ্বারা বিজ্ঞানের সাথে আমদের সনাতনের মিল খুজে পয়া যায়। বিজ্ঞান হলো প্রমানিত সত্যি ।
কেন এত জ্ঞান ছেরে অন্য স্থানে খুজে ফিরবেন নিজের ঠিকানা?
 মানুষ সৃষ্টির রহস্য
পৃথিবী সৃষ্টি, মহাজগত সৃষ্টি, পৃথিবীর সমস্ত প্রানী, উদ্ভিদ সম্পদ, পাহাড় পর্বত, নদ নদী, সাগর দড়িয়া সৃষ্টি নিয়ে অনেক ধরেনর কথা আমাদের জানা আছে। কিছু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে কিছু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে। তবে লক্ষ্যনিয় যে এই সব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞান কোনটাই কারোর সাথে বিরোধ নাই। ধর্ম এই সব সৃষ্টির পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তার কথা সরাসরি বলছে। সৃষ্টিকর্তা কিভাবে এগুলো সৃষ্টি করেছেন তা বলছে। অন্যদিকে বিজ্ঞান এই সব সৃষ্টি’র পিছনে সৃষ্টিকর্তা আছে বা নাই সে বিষয়ে কোন ধরনের কথা বলছে না। বরং এই সব সৃষ্টি কিভাবে সংঘঠিত হতে পারে বা এখন কিভাবে তারা কাজ করছে তা নিয়ে কিছু ব্যাক্তি বিশ্বাস বা ধারনা যুক্তি প্রমান দ্বারা উপস্থাপন করছে। যেমন ধরা যাক মানুষ সৃষ্টির রহস্য। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে আল্লাহ সোবহানা তালা মাটি থেকে প্রথম মানুষ সৃষ্টি করেছেন বলে স্পষ্ট বর্ননা করেছেন। কিন্তু বিজ্ঞান এখনো প্রমান করতে সমর্থ হয় নি যে আদৌ মাটি থেকে মানুষ বা জীবের সৃষ্টি সম্ভব কিনা। আবার মাটি থেকে মানুষ বা জীবের সৃষ্টি যে অসম্ভব তাও বিজ্ঞান বলছে না। কাজেই দেখা যায় মানুষ সৃষ্টির প্রাথমিক উপকরন হিসেবে মাটির ভূমিকা নিয়ে বিজ্ঞান ধর্মের সাথে কোন ধরনের কনফ্রন্টেশনে যাচ্ছে না যতক্ষন পর্যন্ত বিজ্ঞান কোন প্রমান দাঁড় করাতে না পারছে।
আমাদের মধ্যে যারা ক্কোরআন বোঝার চেষ্টা করি তারা হয়তো নিশ্চই অবগত আছি মানুষ সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে। আল্লাহ সোবহানা তালা চার উপায়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ১। মাটি থেকে শুধু মাত্র পুরুষ মানুষ (আদম) ২। স্ত্রী জাতীয় মানুষের সাথে কোন প্রকার যৌনসংশ্রব ছাড়াই শুধুমাত্র পুরুষ (আদম) মানুষের সোমাটিক টিসু বা কোষ থেকে পুর্নাঙ্গ স্ত্রী জাতীয় মানুষ(হাওয়া), ৩। পুরুষ মানুষের সাথে কোন প্রকার যৌনসংশ্রব ছাড়াই শুধুমাত্র স্ত্রী জাতীয় মানুষ (মরিয়ম) এর এম্ব্রায়োনিক টিসু বা কোষ থেকে পুর্নাঙ্গ পুরুষ মানুষ (ঈসা বা যিসাস), এবং ৪। পুরুষ ও স্ত্রী এর মধ্যে যৌন সংগমের দ্বারা সৃষ্ট জাইগটিক টিসু থেকে পুরুষ বা স্ত্রী উভয় জাতীয় মানুষ (আমরা)। এর বাহিরে আর কোন উপায়ের কথা ক্কোরআনে বলা হয়নি।
প্রাচীনযুগে ৩য় বা ৪র্থ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের তেমন প্রসারতা না থাকায় সেই সময়কার দার্শনিকরা মানুষ সৃষ্টির রহস্য উতঘাটনে তাদের বাস্তবতার নিরিখে নিজস্ব ধারনাকেই ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র। আর এ কাজটা করতে গিয়ে তারা কেবলমাত্র জাইগটিক টিসু থেকে মানুষ বা জীব সৃষ্টির রহস্যকেই ব্যাখ্যা করেছেন। শুকনো মাটি, মানুষের শুধুমাত্র সোমাটিক বা এম্ব্রায়োনিক টিসু থেকে পূর্নাঙ্গ মানুষ সৃষ্টির উপর কোন দার্শনিক আলোচনা আসেনি। আধুনিক বিজ্ঞানের সফলতায় জাইগটিক টিসু থেকে মানুষ সৃষ্টির রহস্য উতঘাটন করতে গিয়ে এম্ব্রায়োলোজী’র উদ্ভব ঘটে যা ক্কোরআনে সুরা আলাকে ১৫০০ বছর আগে বর্ননা করা হয়। যদিও এই সুরার বক্তব্য প্রাচীন দার্শনিকদের ত্বত্ত নকল করা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে আমি সে বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির প্রথম অন্য তিন উপায়ের উপর বহুকাল কোন দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক ত্বত্ত আমাদের কাছে আসেনি। সম্প্রতি প্রায় ১০০ বছর আগ থেকে সোমাটিক টিসু এবং এম্ব্রায়োনিক টিসু থেকে জীবের সৃষ্টির উপর অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষনার ফলশ্রুতিতে জানা গেছে যে এও সম্ভব যা আধুনিক বিজ্ঞানে “টিসুকালচার” নামে পরিচিত। কিন্তু এখনো বিজ্ঞান যে বিষয়টাতে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সেটা হলো বিপরিত লিঙ্গের সোমাটিক বা এম্ব্রায়োনিক টিসু থেকে টিসুকালচার এর মাধ্যমে অপর লিঙ্গের মানুষ সৃষ্টি করা সম্ভব কিনা। অর্থ্যাত পুরুষ এর সোমাটিক টিসু থেকে স্ত্রী বা স্ত্রী’র এম্ব্রায়োনিক টিসু থেকে পুরুষ মানুষ সৃষ্টি করা আদৌ সম্ভব কিনা। একই প্রশ্ন উদ্ভিদ বা অন্যান্য প্রানী’র বেলাও উঠেছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম মহিলা ভেড়ার এম্ব্রায়োনিক টিসু থেকে “ডলি” নামের অপর একটা মহিলা ভেড়া সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এম্ব্রায়োনিক টিসু’র টিসুকালচার করে একটা পুর্নাঙ্গ স্ত্রী জাতীয় প্রানী তৈরী করা সম্ভব হলেও পুরুষ প্রানী তৈরী করা সম্ভব হয়নি। আবার সোমাটিক টিসু’র টিসু কালচার করে পুর্নাঙ্গ পুরুষ বা স্ত্রী জাতীয় কোন প্রানীই তৈরী করা এখনও সম্ভব হয়ে উঠেনি। হয়তো সেটাও সম্ভব হবে অদূর ভবিষ্যতে যদি আল্লাহ সোবহানা তালা ইচ্ছা করেন। তবে সোমাটিক টিসু’র টিসু কালচার করে প্রানী দেহের কিছু অঙ্গ প্রতঙ্গ যেমন কিডনী, লিভার, প্রভৃতি তৈরীর চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা তাতে কিছুটা সফলও হয়েছেন। সবচেয়ে সফলতা এসেছে কৃত্রিম রক্ত ও মাংস পেশী তৈরীর ক্ষেত্রে। আগামীতে আমাদের হয়তো বাজার থেকে প্রাকৃতিক গরুর মাংস’র পরিবর্তে কৃত্রিম মাংস কিনে খেতে হতে পারে। দামও কম হবে (২০ টাকা কেজী আশা করি)।
রকে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা মাটি থেকে । যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সন্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ে । তখন ফেরেশ্তারা সকলেই সিজদাবনত হলো – কেবল ইবলিশ ব্যতীত । সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অর্ন্তভুক্ত হলো ।

হাশরের ময়দানে উপস্থিতদের বিভিন্ন অবস্থা

জাহান্নামে অধিকাংশ মহিলা এবং সম্পদশালীরা যাবে
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, আমি জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশই দরিদ্র এবং আমি জাহান্নামে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশই সম্পদশালী এবং মহিলা। [তারগীব]
এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, দেখলাম মর্যাদাবান জান্নাতি গরীব মুহাজির এবং মোমিনদের নাবালেগ বাচ্চারা, আর জান্নাতে সম্পদশালী এবং মহিলাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। তখন আমাকে বলা হল, সম্পদশালীদের হিসাব হচ্ছে এবং তাদের পাপ মাফ করা হচ্ছে। আর মহিলাদের দুনিয়াতে স্বর্ণ এবং রেশম (আল্লাহর দীন থেকে) গাফেল করে রেখেছিল। সে জন্য তাদের সংখ্যা এখানে কম। [তারগীব]
সম্পদ বড় বিপদের জিনিস। তাই খেয়াল করে হালাল পন্থায় উপার্জন করা, আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের হক সঠিকভাবে আদায় করা এবং গুনাহের পথে খরচ না করা আবশ্যক। সম্পদ গুনাহের পথে খরচ না করাটা খুবই কঠিন। এ বিষয়ে অধিকাংশ লোকই ফেল করে। সম্পদ থাকলে মনের খাহেশ, সন্তান ও স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণ এবং সমাজের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে গুনাহের কাজে খরচ করা লাগে।
অধিকাংশ লোকই তাদের সম্পদের সঠিক হিসাব করে যাকাত আদায় করে না। এমন হাজারো লোক আছে, যাদের উপর হজ্জ ফরয হয়েছে অথচ তারা হজ্জ আদায় না করেই মারা যায়। সম্পদশালীদের জন্য গুনাহের সমস্ত দরজাই খোলা থাকে। এ কারণেই সম্পদশালীরা বেশির ভাগই জাহান্নামে যাবে এবং তাদের অনেকের মধ্যে হিসাব দেয়ার জন্য জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এটা তেমন কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়।
জাহান্নামে নারীদের সংখ্যাই বেশি হবে। তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ পূর্ববর্ণিত হাদীস থেকে জানা গেছে। তারা দুনিয়াতে স্বর্ণ এবং রেশমী কাপড়ের মোহে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। সবাই জানেন, মহিলারা মাত্রা ছাড়া অলংকার এবং কাপড়ের লোভী হয়ে থাকে। কাপড় এবং অলংকারের জন্য তারা স্বামীদের হারাম উপার্জনে এবং ঋণে রাখতে বাধ্য করে। এক অনুষ্ঠানে যে গহনা ও পোশাক পরেছে অন্য অনুষ্ঠানে তা পরা মানহানিকর ভেবে লজ্জাবোধ করে। কোথাও গরমের বাহানায় স্বল্প কাপড় পরিধান করে অন্যকে শরীর দেখায়। কতক মহিলা একত্রিত হলেই তাদের মধ্যে কার পোশাক কত আধুনিক ডিজাইনের, কোন কাপড় লেটেস্ট ডিজাইনের তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। এভাবে তারা নিজ নিজ পোশাক ও অলংকারের বড়াই করে, যা বড়ই গুনাহের কাজ। রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে মহিলা লোক দেখানোর জন্য স্বর্ণের অলংকার পরিধান করে সে শাস্তি ভোগ করবে। যে সমস্ত অলংকার হারাম উপার্জনের মাধ্যমে বানানো হয়েছে সেগুলোর জন্য তো আযাব ভোগ করতে হবে এটা স্পষ্ট, কিন্তু যে সমস্ত অংলকার হালাল উপার্জনের মাধ্যমে বানানো হয়, দেখা যায় সেগুলোর যাকাত স্বামী-স্ত্রী কেউই আদায় করে না। আর যে সমস্ত অলংকারের যাকাত দেয়া হবে না, কেয়ামতের দিন সেগুলো কঠিন আযাব হয়ে দাঁড়াবে।
বুখারি ও মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, মহিলারা রাসূলুল্লাহ সা. এর দরবারে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ সা.! কেন মহিলারা জাহান্নামে বেশি যাবে? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এজন্য যে, তোমরা বেশি লানত (অভিশাপ) দিয়ে থাক এবং স্বামীদের নাশোকরী কর (অকৃজ্ঞ হও)। [মেশকাত শরীফ]
জান্নাতবাসীদের জাহান্নাম এবং জাহান্নামবাসীদের জান্নাত দেখানো হবে
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাকে জাহান্নামের সেই স্থান অবশ্যই দেখানো হবে যা তার জন্য বরাদ্দ ছিল। যদি সে বদ আমল করত তাহলে সেখানে অবস্থান করতে হত, যাতে করে সে আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি শোকর আদায় করে। আর যে জাহান্নামে যাবে, তাকে জান্নাতের সে স্থান অবশ্যই দেখানো হবে, যা তার জন্য বরাদ্দ ছিল। যদি সে নেক আমল করত, তাহলে সে সেখানে অবস্থান করত, যাতে করে সে আরো বিচলিত হয়। [বুখারি শরীফ]
জান্নাত এবং জাহান্নাম পূর্ণ করে দেয়া হবে
সূরা কাফে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-  সেদিন আমি জাহান্নামকে বলব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবে, আরো কিছু আছে কি? [সূরা কাফ : ৩০]
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, জাহান্নামিদের জাহান্নামে ফেলা হতে থাকবে, আর জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো আছে কি? আরো আছে কি? এমনকি আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত জাহান্নামের উপর তাঁর (কুদরতী) পা রাখবেন, তাতে জাহান্নাম সংকীর্ণ হয়ে যাবে। তখন জাহান্নাম বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে!
জান্নাতের অনেক জায়গা খালি থাকবে। তখন আল্লাহ পাক নতুন মাখলুক সৃষ্টি করে সেই খালি জায়গা পূর্ণ করে দিবেন। [বুখারি শরীফ]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু জান্নাত জাহান্নাম উভয়কে পূর্ণ করে দেয়ার জিম্মাদারী নিয়েছেন। [মেশকাত শরীফ]
আল্লাহ তাআলা কারো ওপর জুলুম করেন না। তাই তিনি জাহান্নামের জন্য নতুন মাখলুক সৃষ্টি না করে স্বীয় কুদরতী পা দিয়ে তার অপূর্ণ স্থান পূর্ণ করে দিবেন। আর জান্নাতের খালি জায়গা পূর্ণ করার জন্য নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন। আমাদের এক বুজুর্গের কাছে বলা হল, তারাই ভাল থাকবে যারা সৃষ্টি হয়েই জান্নাতে যাবে। তখন বুজুর্গ বললেন, তারা তেমন কি মজা উপভোগ করবে। তারা তো দুনিয়াতেই আসবে না এবং দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টও ভোগ করবে না, তারা কিভাবে সুখ-শান্তি ও আরাম আয়েশের মজা পাবে? সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশের মজা তারাই পায় যারা কষ্ট মসীবতের পর সুখ লাভ করে।
কেয়ামতের দিনের পরিমান
কেয়ামতের দিন খুবই লম্বা হবে। হাদীস শরীফে কেয়ামতের দিন পঞ্চাশ হাজার বছর পরিমাণ লম্বা হবে বলা হয়েছে। [মেশকাত শরীফ]
প্রথমবার শিংগায় ফুঁক দেয়ার পর থেকে জান্নাতিরা জান্নাতে এবং জাহান্নামিরা জাহান্নামে যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশ হাজার বছর পরিমাণ সময় হবে।
এত বড় লম্বা দিন কাফের মুশরিকদের জন্য খুবই কঠিন হবে, কিন্তু ঈমানওয়ালা বান্দাদের জন্য আল্লাহ পাক খুবই সহজ করে দিবেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হুজূর সা. এর কাছে সেদিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, যেদিন হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। সে লম্বা দিনটি কিভাবে কাটবে? হুজূর সা. বলেন, কসম সে সত্ত্বার যাঁর হাতে আমার জান, মুমিনের জন্য সে দিনটি এত সহজ করে দেয়া হবে যেমন দুনিয়াতে ফরজ নামায আদায় করা হয়। [মেশকাত]
মোমিনদের সে দিনটি খুব সহজেই কেটে যাবে। সম্বিত না থাকার কারণে তাদের পেরেশানীও থাকবে না।
মৃত্যুর মৃত্যু
কাফের মুশরিক এবং মোনাফেকরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তাদের আর কখনও মৃত্যু হবে না এবং তাদের আযাবও হালকা করা হবে না। সূরা ফাতেরে এরশাদ হয়েছে-
‘আর যারা কাফের তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তাদের কোন ফয়সালা হবে না, তারা মৃত্যুবরণ করবে না এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও হালকা করা হবে না; কাফেরদের আমি এভাবেই সাজা দিয়ে থাকি।’ [সূরা ফাতির : ৩৬]
গুনাহগার মুসলমান জাহান্নামে সাজা ভোগ করার পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে জান্নাতে যাবে সে সর্বদাই জান্নাতে থাকবে। জান্নাতে কারো মৃত্যু হবে না। সেখান থেকে কাউকে বেরও করা হবে না। কেউ বের হতেও চাইবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে জান্নাতে যাবে সে তথায় চিরদিন থাকবে। [বাইয়িনাহ : ৮] তা ছেড়ে যেতে চাইবে না। যখন সকল জান্নাতি জান্নাতে এবং সকল জাহান্নামি জাহান্নামে পৌঁছে যাবে, তখন ‘মৃত্যু’কে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে উপস্থিত করা হবে এবং সেখানে জবাই করা হবে। তারপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, হে জান্নাতবাসী! আর মৃত্যু নেই। হে জান্নামবাসী! মৃত্যু আর নেই। এ ঘোষণা শুনে জান্নাতবাসী খুবই আনন্দিত হবে, তাদের খুশি অনেক বেড়ে যাবে। আর জাহান্নামিরা খুবই চিন্তিত হবে। তাদের পেরেশানি অনেক বেড়ে যাবে। [মেশকাত শরীফ, বোখারি শরীফ ও মুসলিম]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. সূরা মারইয়ামের  (ওআনযিরহুম ইয়াওমা হাশরাতি) আয়াত তেলাওয়াত করে এর তাফসীরে বলেন, মৃত্যুকে শারীরিক আকৃতি দিয়ে আনা হবে। আকৃতিতে তা হবে সাদা মেষের ন্যায়, যার দেহে কালো দাগও থাকবে। তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী দেয়ালের উপর দাঁড় করানো হবে। তারপর জান্নাতবাসীকে আহ্বান করা হবে, হে জান্নাতবাসী, এ আওয়াজ শুনে তারা ফিরে তাকাবে। এরপর জাহান্নামিদের আহ্বান করে বলা হবে, হে জাহান্নামবাসী! এ আওয়াজ শুনে তারাও ফিরে তাকাবে। এরপর (সকল জান্নাতি এবং জাহান্নামিকে) প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কি একে চিন? তারা সবাই জবাব দিবে, হ্যাঁ (আমরা তাকে চিনি), এ তো ‘মৃত্যু’। অতঃপর তাদের সকলকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা দেয়া হবে, এখন আর মৃত্যু হবে না। এরপর মৃত্যুকে শুইয়ে জবাই করে দেয়া হবে। (মৃত্যুর জবাই দেখে সকল জান্নাতি খুশি আর জাহান্নামিরা খুবই পেরেশান হবে।) জান্নাতিরা এজন্য সীমাহীন আনন্দিত হবে যে, মৃত্যুর জবাইর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ফয়সালা হয়ে গেল, আর কখনও তাদের মৃত্যু আসবে না। তারা অনাবিল আনন্দে চিরকাল জান্নাতে বসবাস করতে থাকবে। আর জাহান্নামিরা সীমহীন পেরেশান হবে। কারণ তাদের আর মৃত্যু হবে না, চিরকালই জাহান্নামে থাকতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি এ ফয়সালা না হত, জান্নাতিরা জান্নাতে এবং জাহান্নামিরা পেরেশানীতেই মরে যেত। [তিরমিযি শরীফ]

জান্নাতে প্রবেশের প্রাথমিক অবস্থা

সারওয়ারে কায়েনাত রাসূলুল্লাহ সা. জান্নাতের দরজা খুলবেন
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সমস্ত পয়গম্বর থেকে আমার অনুসারী বেশি উপস্থিত হবে। আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের কড়া নাড়াব। [মুসলিম শরীফ]
রাসূলুল্লাহ সা. আরো ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। জান্নাতের দারোগা প্রশ্ন করবে, আপনি কে? জওয়াব দিব আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ কথা শুনে সে বলবে, আমাকে হুকুম করা হয়েছে আপনার জন্য খোলার, আর আপনার পূর্বে কারো জন্য যেন না খুলি। [মুলিম]
হুযূর সা. ইরশাদ করেন সর্বপ্রথম আমি যখন জান্নাতের কড়া নাড়াব তখন আল্লাহ তাআলা জান্নাতের দরজা খুলে আমাকে তাতে প্রবেশ করাবেন। আমার সাথে গরিব মোমিনগণ থাকবেন। এটা আমি অহংকার করে বলছি না। (তারপর ইরশাদ করেন,) আল্লাহর নিকট আমি পূর্বাপর সকলের চেয়ে প্রিয় হব। [তিরমিযী]
জান্নাত এবং জাহান্নামে মানুষ দলে দলে প্রবেশ করবে
জাহান্নামীদের ভর্ৎসনা তিরস্কার করা হবে আর জান্নাতিদের সাদর অভ্যর্থনা জানানো হবে। জাহান্নামের দরজা পূর্ব থেকেই জেলখানারমত বন্ধ আর জান্নাতের দরজা খোলা থাকবে। ফেরেশতারা সবাই কাফেরদের খুবই লাঞ্ছনার সাথে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাদের কুফরীর স্তর অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হবে। আল্লাহ ইরশাদ করেন-
কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
‘যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং তাদের জাহান্নামের রক্ষীরা বলবে, তোমাদের নিকট কি কোন রাসূল আসেননি? যিনি তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর আয়াতসমূহ আবৃত্তি করতো এবং তোমাদের আজকের দিনে উপস্থিত হওয়ার ভয় দেখাতো? জাহান্নামীরা তখন উত্তর দিবে হ্যাঁ, রাসূলগণ এসেছিলেন, কিন্তু কাফেরদের জন্য জাহান্নামের ওয়াদা অবশ্যই সত্যে পরিণত হবে। (তখন) তাদের বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, তাতে চিরকাল অবস্থান কর, তা অহংকারীদের জন্য বড় নিকৃষ্ট ঠিকানা। [সূরা যুমার : ৮১]
জান্নাতীদের সম্পর্কেও পবিত্র কুরআনে এমনই ইরশাদ হয়েছে- অর্থাৎ আর যারা নিজেদের প্রভুকে ভয় করত, তাদের ভিন্ন ভিন্ন দলে বেহেশতের দিকে রওয়ানা করানো হবে।
ঈমান এবং তাকওয়া অনুযায়ী শ্রেণী বিভাগ হবে। সম্মান এবং স্তর অনুযায়ী মুমিনগণ ভিন্ন ভিন্ন জামাতে ভাগ হবে। তাদের স্তর, সম্মান এবং ইজ্জত অনুযায়ী জান্নাতের দিকে রওয়ানা করানো হবে। তাদের অভ্যর্থনার জন্য জান্নাতের দরজা পূর্ব থেকেই খোলা থাকবে। তারা জান্নাতের নিকটবর্তী হলে জান্নাতরক্ষীরা তাদের শান্তি এবং অনাবিল সুখের সুসংবাদ শুনাবেন। কুরআনে করীমের ইরশাদ হয়েছে- ‘যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদের দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট পৌঁছবে তখন তার দরজাসমূহ খুলে যাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা বলবে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক. তোমরা আনন্দে থাক, চিরকাল থাকার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর। [সূরা যুমার : ৮৩] নিজের অনুসারীদের সামনে শয়তানের সাফাই
দুনিয়াতে শয়তান তার দলবল নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং হক ও ন্যায়ের পথ থেকে সরিয়ে র্শিক এবং কুফরি করায়, কিন্তু কেয়ামতের ময়দানে শয়তান নিজের ভুল পাল্টিয়ে উল্টা মানুষের উপর দোষ চাপিয়ে বলবে, তোমরা কেন আমার কথা মেনেছ আমি কি তোমাদের আমার কথা মানতে বাধ্য করেছিলাম?
কুরআনে করীমে ইরশাদ হয়েছে-
‘আর যখন ফয়সালা সমাপ্ত হবে তখন শয়তান বলবে (তোমাদের আমাকে মন্দ বলা উচিৎ নয়), নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের সাথে সত্য ওয়াদা করেছেন এবং আমিও তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলাম, কিন্তু আমি সে ওয়াদার খেলাপ করেছি, আর তোমাদের উপর তো আমি কোন জোর খাটাইনি, আমি শুধু তোমাদের ডেকেছি আর তোমরা (সেচ্ছায়) আমার কথায় সাড়া দিয়েছ। তাই তোমরা আমাকে তিরষ্কার করো না; বরং তোমরা নিজেদেরই তিরষ্কার কর। আমি তোমাদের সাহায্যকারী নই, তোমরাও আমার সাহায্যকারী নও; আমি তোমাদের এ কাজ কখনও পছন্দ করিনি, তোমরা এর পূর্বে (দুনিয়াতে) আমাকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয়ই জালেমদের জন্য মহাযন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। [সূরা ইবরাহীম : ২২]
শয়তানের বক্তব্যের মর্মার্থ হল- আমি তোমাদের হক পথ থেকে সরানোর জন্য কাজ করেছিলাম, চেষ্টা করেছিলাম। আমার কাজই ছিল এটা। তোমরা আমার কথা শুনলে কেন? তোমরা নিজেরাই অপরাধী। তোমরা নবীদের কথা মাননি, তাঁদের কথা শুননি কেন? আম্বিয়ায়ে কেরামের দেখানো সঠিক পথ অনুসরণ না করে আমার দেখানো মিথ্যা বাতিল পথের অনুসরণ করেছ। আমার কথায় কান দিয়েছ, এটা আমার দোষ নয়। কারণ আমি তোমাদের উপর কোন প্রকার জোর খাটাইনি যাতে তোমরা কুফরি এবং শিরিক করতেই হত। অতএব, আজকে আমাকে খারাপ বলে কি হবে, তোমরা নিজেরাই নিজেদের তিরষ্কার কর। আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারব না। অতএব এখন তোমাদের শাস্তি ভোগ করতেই হবে। দুনিয়াতে তোমরা আমাকে আল্লাহর শরীক বানাতে, প্রকৃতপক্ষে আমি তা পছন্দ করিনি। আজকে আমি তোমাদের আমাকে আল্লাহ তাআলার শরীক বানানোর কাজে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
উম্মতে মোহাম্মদি সর্বপথম জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সংখ্যায় বেশি হবে
মুসলিম শরীফে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, আমরা সবার শেষে দুনিয়াতে  এসেছি, আর কেয়ামতের দিন অন্য সকল সৃষ্টির পূর্বে আমাদের ফয়সালা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা এখানে শেষে এসেছি। (আর) কেয়ামতের দিন প্রথমে যাব এবং সর্বপ্রথম জান্নাতে আমরাই প্রবেশ করব। [মেশকাম শরীফ]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, হুযূর সা. ইরশাদ করেন, (কেয়ামতের দিন) জান্নাতিদের ১২০কাতার হবে। যার মধ্যে এ উম্মতের কাতার হবে ৮০ আর বাকী ৪০কাতার হবে সমস্ত উম্মত মিলিয়ে। [মেশকাত শরীফ]
সম্পদশালীরা হিসাবের কারণে জান্নাতে যেতে বাধাগ্রস্ত হবে
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেনে, গরিব অভাবগ্রস্ত লোকেরা ধনী-সম্পদশালী লোকদের পাঁচশ বৎসর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [তিরমিযী শরীফ]
হুযূর সা. ইরশাদ করেন, আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক মিসকীন। আর সম্পদশালীরা (হিসাবের জন্য) আটকে আছে। জাহান্নামীদের জাহান্নামে যাওয়ার হুকুম হয়ে গেছে আর আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম জাহান্নামে প্রবেশকারীদের বেশির ভাগই মহিলা। [বুখারি ও মুসলিম]
এ হাদীস শরীফে হুযূর সা. কেয়ামতের দিনের এক দৃশ্য বর্ণনা করেন, যা মহান আল্লাহ পাক তাঁকে দেখিয়েছেন। এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল, সম্পদশালীরা জান্নাতে যেতে দেরী হবে। আবার এও বুঝা গেল, অভাব এবং সম্পদ না থাকার কারণে গরিবেরা ধনীদের পাঁচশ বৎসর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু এখানে এটা বুঝানো হয়নি, শুধু দরিদ্রতার কারণে জান্নাতে যাবে; বরং তার সাথে সাথে নেক আমলও থাকতে হবে। বদ আমলকারী দরিদ্ররাযেন এটা না বুঝে, আমরা অবশ্যই জান্নাতে যাব, আমাদের দরিদ্রতার ফযীলত রয়েছে। অবশ্যই দরিদ্রতার ফযীলত রয়েছে, তবে তার সাথে নেক আমলও থাকতে হবে। যে নেক আমলের কারণে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত সে দরিদ্রতার কারণে সম্পদশালীদের আগে জান্নাতে চলে যাবে। অনেক লোক আছে যারা দরিদ্র আবার বদ আমলও করে, নামায রোযা থেকে গাফেল, তারা বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত, তারা দুনিয়া-আখেরাত উভয় স্থানেই হতভাগা। কেননা তারা দুনিয়াতেও অভাবে কষ্ট ক্লেশে দিন কাটায় আবার আখেরাতেও আযাব ভোগ করবে। [তারগীব]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বির্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, (লোকেরা) কেয়ামতের দিন সবাই একত্রিত হবে। এরপর এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, এই উম্মতের (উম্মতে মোহাম্মদি) দরিদ্ররা কোথায়? তোমরা কি কি আমল করেছ? হিসাব দাও। তারা আরজ করবে, আপনি আমাদের দরিদ্রতা দিয়ে পরীক্ষা করেছেন, আমরা সবর করেছি (আপনার ইচ্ছায় আমরা খুশি ছিলাম)। আপনি সম্পদ ও ক্ষমতা অন্যদের দিয়েছেন আর আমাদের গরিব রেখেছেন। আল্লাহ জাল্লাহ শানুহু বলবেন, তোমরা সত্য বলেছ। (এরপর অন্য) সবার পূর্বে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সম্পদশালী ও ক্ষমতাশালীরা হিসাব দেয়ার জন্য থেকে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম রা. আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সা. মোমিনগণ সেদিন কোথায় থাকবে? তিনি বলেন, তাদের জন্য নূরের চেয়ার রাখা হবে, মাথার উপর মেঘের ছায়া দেয়া হবে। অনেক বড় দিন মোমিনদের জন্য এক ছোট দিনের অংশের চাইতেও কম হবে।

জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাতের তাঁবু এবং গম্বুজ
হযরত আবু মুসা আশআ’রী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে মুমিনদের জন্য এমন তাঁবু হবে যা একটি মুক্তা দ্বারাই নির্মিত (মুক্তাটি বড় হবে)। যার ভিতর দিক হবে ডিমের খোসার মত, প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। তার প্রত্যেক কোণায় মুমিনদের সাথে সম্পর্কিতরা থাকবে। এক কোণা থেকে অপর কোণায় অবস্থিতদের দেখা যাবে না। তাদের কাছে সকল মুমিনই আসা-যাওয়া করবে। (এরপর ইরশাদ করেন, মুমিনের জন্য) দু’টি এমন বাগান হবে, তার পাত্র এবং তাতে যা কিছু আছে সবকিছু হবে রূপার, আর দু’টি বাগান এমন হবে তার পাত্র এবং তাতে যা কিছু আছে সবকিছু হবে স্বর্ণের। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নি¤œস্তরের জান্নাতি সে, যার জন্য আশি হাজার খাদেম এবং বাহাত্তর জন স্ত্রী হবে। সে এমন একটি গম্বুজ পাবে যা মণিমুক্তা এবং ইয়াকূত দ্বারা নির্মিত। তার দৈর্ঘ-প্রস্থ হবে সানআ ও জাবিয়া শহরের দূরত্ব সমান। [তিরমিযি]
জান্নাতের মওসুম
সূরা দাহরে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর তাদের ধৈর্যশীলতার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তাদের উদ্যান ও রেশমী বস্ত্র দিবেন, সেথায় তারা সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে। তারা সেখানে অতিশয় গরম অথবা অতিশয় শীত বোধ করবে না। [সূরা দাহর]
তাফসীরে মাজহারী প্রণেতা এ আয়াতের তাফসীরে লেখেন, জান্নাতে ঠাণ্ডা গরম কোনটাই হবে না। সেখানকার আবহাওয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে। তারপর লেখেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের নিজস্ব আলো রয়েছে। রবের নূরানী আলোর কারণে সেখানে চন্দ্র-সূর্যের আলোর প্রয়োজন হবে না। এরপর তিনি বায়হাকীর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, শুআইব বিন জাইহান এবং আবুল আলিয়া রহ. (ফজরের নামাজের) সূর্য উদয় হওয়ার আগে লোকালয়ের বাইরে যান। সে সময়ের দৃশ্য দেখে আবুল আলিয়া রহ. বলেন, জান্নাতের অবস্থা এমন হবে। অর্থাৎ এখনকার আবহাওয়া, আলো এবং অবস্থা যেমন, জান্নাতের আবহাওয়া এবং অবস্থাও তেমনি হবে।
তাফসীরে মাজহারী প্রণেতা লেখেন, হযরত আবুল আলিয়া রহ. জান্নাতের আবহাওয়াকে সকাল বেলার আলোর সাথে তুলনা করেছেন, তা প্রকৃতপক্ষে ঠিক হয়নি। কেননা, সকাল বেলার আলো ঝাপসা হয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্ধকারের লেশ থাকে। হযরত আবুল আলিয়া রহ. এর উদ্দেশ্য এমন হতে পারে যে, সকাল বেলা যেমন সবদিক থেকে আলো বের হতে থাকে (বিশেষ করে জনবসতি থেকে বের হলে দেখা যায়), এভাবে জান্নাতের আলোও সবদিক থেকে বের হবে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কথা হলো, উপমা সকাল বেলার সময়ের সাথে দেয়া হয়েছে, আলোর সাথে নয়।  আবুল আলিয়ার কথার উদ্দেশ্য হলো, যেমনিভাবে সকাল বেলা (সুর্যোদয়ের পূর্বে) এক আকর্ষণীয় এবং ¯িœগ্ধ হাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং সর্বদিকে আলো-ছায়ার এক অপূর্ব মিলন ঘটে, কিন্তু এমন আলো হয় না যা দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটায়, ঠিক তেমনি এক অপূর্ব অবস্থা জান্নাতে হবে। আলোকোজ্জ্বলও হবে আবার গাঢ় ছায়াও থাকবে। আলো যত প্রখরই হোক না কেন, ছায়া শেষ হবে না এবং দৃষ্টিরও ব্যঘাত ঘটবে না। আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে সূরা রা’দে ইরশাদ করেন-
‘পরহেজগারদের জন্যে প্রতিশ্রুত জান্নাতের অবস্থা এই যে, তার নিম্নে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। তার ফলসমূহ চিরস্থায়ী এবং ছায়াও। এটা তাদের প্রতিদান, যারা সাবধান হয়েছে এবং কাফেরদের প্রতিফল অগ্নি।’ [সূরা রা’দ : ৩৫]
এ আয়াত দ্বারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জান্নাতে সর্বদা ছায়া থাকবে। আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে সূরা নিসায় ইরশাদ করেন-
‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, অবশ্য আমি প্রবিষ্ট করাব তাদেরকে জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ। সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। সেখানে তাদের জন্য থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্ত্রীগণ। তাদেরকে আমি প্রবিষ্ট করব ঘন ছায়া নীড়ে।’ [সূরা নিসা : ৫৭]
তাফসীরে ইবনে কাসীর প্রণেতা লেখেন, ¯িœগ্ধ ছায়া এমন যা হবে গাঢ়, আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর।
জান্নাতে শুধু শান্তি সেখানে দুঃখ-কষ্টের নাম নিশানাও নেই
‘আর তারা বলবে- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দূঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে বসবাসের গৃহে স্থান দিয়েছেন, তথায় কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি।’ [সূরা ফাতির : ৩৪-৩৫]
তাফসীর গ্রন্থ মাআলেমুত তানজিলে রয়েছে, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করে উক্ত আয়াতের কথাগুলো বলতে থাকবে। তারা এ মর্মে আল্লাহর প্রশংসা করবে, আল্লাহ তা’আলা তাদের দুঃখ-কষ্ট চিরদিনের জন্য দূর করে দিবেন। দুনিয়ায় থাকাকালীন যেসব কারণে দুঃখ-কষ্ট হতো, তার সবই আল্লাহ তা’আলা শেষ করে দিবেন। তাদের চিন্তা ও পেরেশানীর কিছুই থাকবে না। সংসারের চিন্তা থাকবে না, আয়-ব্যয়ের চিন্তা থাকবে না, কোন প্রকার ভয়-ভীতি থাকবে না, অসুখ-বিসুখও থাকবে না। মৃত্যু, কবর, সওয়াল-জওয়াব, আলমে বরযখ, হাশর, মীযান কোন কিছুরই চিন্তা পেরেশানী থাকবে না। এমন কি তাদের প্রাপ্ত নেয়ামত শেষ হওয়া বা ছিনিয়ে নেয়ার ভয়ও থাকবে না। দুনিয়ার মতো ঘর সাজানোর চিন্তা থাকবে না। এবাদত-বন্দেগীর প্রয়োজন হবে না। কোন হুকুম-আহকাম পালনের বাধ্য বাধকতা থাকবে না। শান্তি আর শান্তিউ শুধু থাকবে। আখেরাতের শেষ মঞ্জিলে পৌঁছে সকল দুঃখ-কষ্ট ও মেহনতের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে তারা দারুল কেয়ামাহ (চিরস্থায়ী বসবাসের প্রকৃত বাসযোগ্য স্থান) জান্নাতে প্রবেশ করে মহান আল্লাহর হামদ, সানা ও স্তুতি গাইতে থাকবে।

Comments